রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:১২ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ গোবিন্দগঞ্জে চরাঞ্চলের চাষিদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে মিষ্টি আলু। এ অঞ্চলে উৎপাদিত আলু রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। ইতোমধ্যে জাপান, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ চাষি ও রপ্তানিকারকদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
গোবিন্দঞ্জের রাখালবুরুজ ইউনিয়নটি করোতোয়া নদীঘেঁষা। এ নদী-সংলগ্ন চরাঞ্চল শুষ্ক মৌসুমে রূপ নেয় ধু ধু মরুভূমিতে। বিস্তীর্ণ চরে শুধু বালু আর বালু। কিছুই জন্মে না। বছরের পর বছর জমি পতিত থাকে। বছর তিনেক আগে এলাকায় আসেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। অমিত সম্ভাবনা দেখতে পান। পাল্টে যায় এখানকার দৃশ্যপট।
এখন দিগন্তজুড়ে সবুজ আর সবুজ। থোকায় থোকায় মিষ্টি আলুর গাছ নজর কাড়ে সবার। বিশেষ জাতের এ আলু রপ্তানি হয় জাপান, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে। দিন দিন চাহিদা বাড়ছে এ আলুর। দ্বার খুলছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেশে কন্দাল জাতীয় ফসল উন্নয়নে প্রকল্প নেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এরই অংশ হিসেবে জাপান থেকে আনা হয় কোকেই ১৪জিও জাতের মিষ্টি আলুর শাখা বা ডাল। সেই ডাল কেটে চারা তৈরি হয়েছে। সেগুলো রাখালবুরুজ ইউনিয়নের কুঠিপাড়া, বড়দহ ও নয়াবাজারে, হরিরামপুর ইউনিয়নের নাওভাঙা, মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের বোচাদহ, বালুয়া, শালমারা এলাকার কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। কৃষকদের উৎসাহ দিতে তৈরি হয় ৪৫টি প্রদর্শনী ক্ষেত। এবার উপজেলায় ১৩০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার টন। গত তিন বছর এ উপজেলা থেকে ৩৫ টন আলু জাপানে পাঠানো হয়। এতে প্রায় ২৭ হাজার ডলার আয় হয়েছে, যা ৩০ লক্ষাধিক টাকার মতো। উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে।
পারসোনাইডাঙ্গা এলাকার কৃষক বিপুল মিয়া বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে দুই বছর ধরে এ আলুর চাষ করছি। এর চাহিদা প্রচুর। দামও ভালো পাওয়া যায়। তাই এবার প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে আবাদ করেছি। ১৮০ মণ আলু উৎপাদিত হয়েছে। প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আড়াই লক্ষাধিক টাকার মতো পেয়েছি। খরচ বাদে অর্ধেকেরও বেশি লাভ হয়েছে।
একই এলাকার কৃষক সেলিম সরকার বলেন, বালু মাটি ও পতিত জমিতে এই আলু ভালো হয়। একটি মিষ্টি আলুর ওজন ৩০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম হয়। বাজারে এর চাহিদাও বেশ। এ কারণে দুই বছর ধরে এলাকার পতিত জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আসছে। উৎপাদন বাড়াতে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা।
সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, চরের পতিত জমি বছরের পর বছর অনাবাদি থাকত। সেখানে বিশেষ জাতের আলু আবাদ হচ্ছে। সেই আলু বাছাই করে ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে যায়। তিন বছরে ৩০ হাজার টন আলু জাপান, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। এতে ২৭ হাজার ডলার আয় হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যা ৩০ লক্ষাধিক।